গল্প রাইটিং:-"বুকের বাঁ পাশে "II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

আজ যেন রাত্রির শহরটা একটু বেশীই চুপচাপ। আলো আছে, কিন্তু উষ্ণতা নেই। হৃদয় ছাদে বসে আছে একা, পাশে একটা খালি চায়ের কাপ আর হাতে একটা মোবাইল। মোবাইলের স্ক্রিনে সর্বশেষ মেসেজটা এখনো জ্বলজ্বল করছে। যাতে লিখে আছে-"তুমি আর কখনো এসএমএস দিওনা প্লিজ।" এক সময়ে এই নীলিমাই হাসতে হাসতে বলতো-হৃদয়ের পাশে থাকলে মনে হয়, পৃথিবীটা একটু কম কঠিন।” এখন সে-ই বলছে, আর কোনো যোগাযোগ নয়। হৃদয় মাথা নিচু করে বসে থাকে। তার স্মৃতিগুলো যেন আজ খুব বেশি শব্দ করে ফিরে আসছে হৃদয়ের কাছে বারে বারে।
হৃদয় আর নীলিমার গল্পটা শুরু হয়েছিল এক বর্ষার দিনে। ইউনিভার্সিটির করিডোরে হঠাৎ ঝড়ের মতো এক মেয়ের ধাক্কায় বই ছিটকে পড়ে যায় হৃদয়ের হাত থেকে। মেয়েটি আর কেউ নয় নীলিমা। যে কিনা ছিল ভার্সিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশী সুন্দরী। আর হৃদয় তখন সবার চেয়ে আলাদা। একটু চুপচাপ, বইপ্রেমিক, আর নিজের গণ্ডিতে থাকা একটা ছেলে। অথচ নীলিমা বিপরীত। প্রাণবন্ত, সাহসী, একটু পাগলাটে।
দুজনের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল বই নিয়ে। আর প্রেম শুরু হয়েছিল নীরবতা দিয়ে। নীলিমা সব সময় বলতো হৃদয়ের চোখে একটা বিষণ্ণতা আছে। যা কিনা একমাত্র নীলিমাই বুঝতে পারতো। আর নীলিমার এমন কথা শুনে হৃদয় দিতো। কারন একমাত্র নীলিমা যার কাছে কিনা হৃদয় তার বিষন্নতার কারন তুলে ধরেছিল।
হৃদয় আর নীলিমার একসঙ্গে কাটানো সময়গুলো ছিল এক একটা জাদুর মতন।বিকেলের ঝলমলে আলো, বাসস্ট্যান্ডের সস্তা ফুচকা, স্টার মার্ক করা কবিতার লাইন। হৃদয়ের মন চলে গিয়েছিল নীলিমার কাছে। হৃদয় বলতে শিখেছিল, হাসতে শিখেছিল। সে বুঝেছিল, ভালোবাসা মানে শুধু “ভালোবাসি” বলা নয়। ভালোবাসা মানে কারো পাশে চুপ করে বসে থাকা ও এক ধরনের অঙ্গীকার।
কিন্তু নীলিমা ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছিল। জীবন তাকে বাস্তবের সামনে দাঁড় করিয়েছিল। বাবার অসুস্থতা, ভাইয়ের চাকরির চিন্তা, সংসারের চাপ। সব কিছুর মাঝে নীলিমা যেন এক অদৃশ্য দেয়াল তুলে ফেলল। একদিন নীলিমা হৃদয় কে বলেই দিলো যে হৃদয়ের সাথে ঘুরে বেড়ানোর সময় নীলিমার নেই। তাছাড়া নীলিমা আর হৃদয়ের যে প্রেম তার কোন ভবিষৎ ও নেই। তবে হৃদয় বুঝতে পারছিল, তানিয়া শুধু ক্লান্ত নয়, সে ভেঙে পড়েছে। তাই হৃদয় নীলিমার সাথে থাকতে চেয়েছিল। হউক সেটা কাছে অথবা দূরে ।
হদয়ের এমন কথায় সেদিন নীলিমা হৃদয় কে ফিরিয়ে দিয়েছিল। নীলিমা ভেবেছিল হৃদয়ের থাকা মানে নীলিমার দায়িত্ব বেড়ে যাওয়া। তাই নীলিমা একা হতে চেয়েছিল। আর সেদিনের পর হতে বন্ধ হয়ে গেল নীলিমা আর হৃদয়ের যোগাযোগ। কিন্তু হৃদয় মাঝে মাঝে নীলিমা কে এসএমএস করতো। হৃদয় জানতে চাইতো যে নীলিমা কেমন আছে?কিন্তু নীলিমা হৃদয়ের এসএমএস এর কোন উত্তর দিতো না। হৃদয় নীলিমা কে তার সব শেষ এসএমএস এর মাধ্যমে লিখেছিল-“আমি অপেক্ষা করব না বলিনি। শুধু বলেছিলাম, আমি থাকব। তুমি চাইলে না দেখেও।” আর তানিয়া উত্তর দিয়েছিল -"তুমি আর কখনো লিখো না, প্লিজ।"
আজ তিন বছর হয়ে গেছে। হৃদয় এখনো অপেক্ষা করে না ঠিকই, কিন্তু ভুলেও যায়নি। সে নতুন কাউকে জীবনেও আনেনি। রাতে, কখনো যখন বৃষ্টি নামে, হৃদয় নীলিমার গলায় শোনা কবিতার লাইনগুলো মনে মনে করে। যে কবিতার ভাষা ছিল- “যদি একদিন ফিরতে চাও, আমি ঠিক ছায়ার মতো থাকব পেছনে।” কিন্তু হৃদয় আজ বুঝে গেছে, নীলিমা আর ফিরবে না হৃদয়ের জীবনে। আর নীলিমার ভালোবাসাও ফিরে আসবে না। কিন্তু কিছু অনুভব থেকে যাবে। যা কিনা কখনও মুছে যাওয়ার নয়। শুধু চুপ করে থেকে যায়, নিঃশব্দে, বুকের বাঁ পাশে।
সব ভালোবাসার শেষ হয় না বিচ্ছেদে। কিছু ভালোবাসা থেমে যায় বলেই বেঁচে থাকে আজীবন — নিঃশব্দ, অথচ গভীরে।
কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটি। আশা করি আপনাদের সবার কাছেই আমার গল্পটি বেশ ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy

https://x.com/maksudakawsar/status/1924865837556761030
https://x.com/maksudakawsar/status/1924865740118884505
https://x.com/maksudakawsar/status/1924865643851219258